Wednesday, May 24, 2023

সাবাশ ফেলুদা: রহস্যটা গড়বড়ে!

অরিন্দম শীল যখন ব্যোমকেশের মতো শান্তশিষ্ট রহস্যভেদীকে দিয়েও গুণ্ডা ঠেঙিয়েছিলেন, গোয়েন্দা পুলিশ শবরকে আরো স্বাভাবিকভাবে গুণ্ডাদের পিছনে ছুটিয়েছিলেন, তখন ফেলুদার মতো প্রাত্যহিক শরীরচর্চা করা কাউকে পেলে তিনি যে প্রবেশের দৃশ্য থেকেই দৌড় করাবেন, তাতে নতুন করে কিছু বলার নেই। তবে মুশকিল হচ্ছে, মগজাস্ত্রের কারবারীদের পরিচয় দৃশ্যটা যদি মিলখা সিং জাতীয় হয়, তাহলে মাথা থেকে রহস্যের আমেজটা ওই উড়ন্ত শিখের গতিতেই উড়ে যায়! তাই পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ফেলুদার চরিত্রে ঠিক যে জমাতে পারলেন না, বোধহয় তার প্রধান কারণ পরিচালক ফেলুদাকে দৌড়বীর এরকুল পোয়ারো করতে চেয়েছেন বলে। আবার অন্যদিকে ঋত্বিক চক্রবর্তীও কি কৃত্রিম কিছু দৃশ্যে! যদিও ফেলুদার গল্পগুলো আমার পড়া থাকার দরুন চরিত্রদের চমকগুলো মোটামুটি জানাই থাকে, তবুও বলতে বাধ্য হচ্ছি যে আমার খুব প্রিয় অভিনেতাদের তালিকায় থাকা এই ব্যক্তিটিকে এই সিরিজে কিছু জায়গায় বেশ প্রেডিক্টেবল লেগেছে!
অবশ্য পরিচালককে একটা ব্যাপারে কিন্তু তারিফ করতেই হবে - ফেলুদাকে সেলফোনের যুগে এনে ফেলেও এতটুকু বেমানান করে দেখাননি কাহিনিটাকে, উপরন্তু স্মার্টফোনের এক বিশেষ বিরক্তিকর 'ওভারস্মার্ট' আচরণকে জুতসইভাবে ব্যবহার করে গল্পে বর্ণিত প্রযুক্তির মূখ্য এক ভূমিকার যুক্তিগ্রাহ্য আধুনিকিকরণ করেছেন যা দেখে রায়মশাই পর্যন্ত খুশি হতেন মনে হয়।
তারিফ পাওয়ার যোগ্য অবশ্য আরো তিন অভিনেতা। প্রথম দুজনের নাম হলো দেবপ্রিয় মুখার্জ্জী ও সৌরসেনী মৈত্র। দুজনেই এমন দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যে দুটি চরিত্র বইতে নেই, কিন্ত গল্পের খাতিরে এমনই বিশ্বাসযোগ্যভাবে অভিনয়টা করেছেন যে আমাকে বইটা খুলে নিশ্চিত হতে হয়েছে চরিত্রদুটির উপস্থিতি সম্পর্কে। কাহিনীতে নতুন চরিত্র ঢুকিয়েও তাকে নিপুণভাবে গল্পের মধ্যে মিশিয়ে দেওয়ার জন্য তাই পরিচালক ও এই দুই অভিনেতাদের প্রশংসা করতেই হবে। দেবপ্রিয় মুখার্জ্জী এক মরাঠি পুলিশ অফিসারের চরিত্রে যে সাবলীল অভিনয়টা করলেন, দেখে কে বলবে তিনি বাঙালি না মরাঠি? এদের বাদ দিয়ে তৃতীয় যে অভিনেতা পুরো সিরিজটা মাতিয়ে দিলেন, সেই রুদ্রনীল ঘোষ সেরা অভিনয়টা উপহার দিলেন নিশিকান্ত পাকড়াশির চরিত্রে। 'গ্যাংটকে গণ্ডগোল' যেহেতু 'সোনার কেল্লা'র ঠিক আগের উপন্যাস, তাই লালমোহনবাবু এতে নেই। সত্যজিতের ভাবনায় থাকা লালমোহনবাবুর কাছাকাছি চরিত্র এই নিশিকান্ত পাকড়াশির ভূমিকায় রুদ্রনীল মজাদার অথচ হালকা সন্দেহজনক এই চরিত্রটির মধ্য দিয়ে কৌতুকের দরকারটা মিটিয়ে দিয়েছেন। আবার সিধুজ্যেঠার চরিত্রে প্রবীণ অভিনেতা বিপ্লব চ্যাটার্জ্জীকেও বেশ মানিয়ে গেছে।
তাই রুদ্ধশ্বাসে পড়ে ফেলার মতো টানটান কাহিনি, 'গ্যাংটকে গণ্ডগোল'কে টেনে টেনে দশটা পর্বে দেখালেও বিশেষ কিছু চরিত্রের জন্য সিরিজটা দর্শকদের কাছে খানিকটা নতুনত্ব আনতে পারে।

Friday, May 5, 2023

জাতিস্মর পরিচয়

ব্যাপক একটা সিরিজ দেখলাম হইচইতে।

জাতিস্মর!

তুখোড় প্লট, রহস্য ও নাটকীয়তায় মোড়া চূড়ান্ত চমক, অসামান্য সিনেমাটোগ্রাফি, গা ছমছমে সুর আর সঙ্গতিপূর্ণ পরিচালনবোধের মিশেলে উপভোগ্য সাতটি পর্ব।

বাংলায় টানটান উত্তেজনাপূর্ণ রহস্যের এরকম সিরিজ বহুদিন পর দেখলাম।

জমাটি রহস্যে ঘেরা পরিবেশের সূত্রপাত শহর থেকে খানিক দূরে এক গ্রামের ব্যবসায়ী পরিবারের প্রাসাদোপম অট্টালিকায় একটি মেয়ের আচমকা আবির্ভাবে। শহর থেকে গ্রামেতে ফটো তুলতে আসা মেয়েটি হঠাৎ করে যেন অজ্ঞান হয়ে যায় প্রাসাদটির সামনে। তারপর আপাতদৃষ্টিতে তাকে যখন সুস্থ মনে করা হয়, সে শুরু করে এক অদ্ভুত আচরন, যেন বাড়িটি তার কতদিনের চেনা! দিনটাও ছিল অদ্ভুত! গ্রামের মন্দিরের দেবী বছরের সেইদিনই নাকি শুধুমাত্র পূজা গ্রহণ করেন ও বাকি দিনগুলো মন্দির বন্ধ থাকে। প্রচলিত আছে যে, সেদিন নাকি গ্রামের কোনো মৃত ব্যক্তির আত্মা ফিরে আসবে! তাই এই বিশেষ দিনটিতে শুরু হওয়া মেয়েটির আচরণ এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, আর তার সাথে যেন পাওয়া যায় পুরনো কোন ভয়াবহ ঘটনার ইঙ্গিত!

বাকিটা সানি ঘোষ রায়ের পরিচালনায় অনুজা চট্টোপাধ্যায়ের কাহিনীর চমকে উপভোগ করা যাবে। সাথে ইন্দ্রনীল মুখার্জ্জীর অসাধারন সিনেমাটোগ্রাফি, আনিস আহমেদ ও দেবায়ন ব্যানার্জ্জীর ভয় জাগানো সুরের আবহ, তীর্থঙ্কর মজুমদারের গা শিরশিরানি ধ্বনি প্রক্ষেপণ, ভৌতিক পরিবেশ তৈরি করতে আর কি চাই? অবশ্য আর যা চাই, সেটা কৃষ্ণেন্দু দেওয়ানজির ত্রুটিহীন অভিব্যক্তি ও মধুমিতা সরকারের অভিনয়ের অভিনবতা মিটিয়ে দিয়েছে! পাশাপাশি, রোহন ভট্টাচার্যও সামঞ্জস্যপূর্ণ অভিনয় করেছেন বাকি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রদের মধ্যে।