আমি কাহিনীটা পড়েছি, সত্যজিতের 'চিড়িয়াখানা' সিনেমা ও অঞ্জন দত্তের 'ব্যোমকেশ ও চিড়িয়াখানা' সিনেমা সিডিতে দেখেছি, বাসু চ্যাটার্জ্জীর 'চিড়িয়াঘর' সিরিয়াল টিভিতে দেখেছি। কাহিনীটা জানি, কে খুন হবে জানি, কে খুন করবে জানি, ব্যোমকেশ কোথায় ভুল করবে জানি, খুনী কখন ধরা পড়বে জানি, মোটিভ জানি, চরিত্রদের ধরন জানি, কিন্তু কিছুতেই পুরনো যেন হয় না রহস্যের এই অধ্যায়গুলো। তার উপর যদি পরিচালক হয় নতুন, মানে নতুন করে আবার পুরনো স্বাদ পাওয়ার যদি কোনো সুযোগ থাকে, তাহলে তো কথাই নেই! দেখতেই হবে!
তাই সুদীপ্ত রায়ের পরিচালনায় ব্যোমকেশের অষ্টম সিজন হইচই ওটিটি প্ল্যাটফর্মে দেখে ফেললাম। নামটা পিঁজরাপোল করা হয়েছে, প্রথম পর্বে ব্যোমকেশের উপস্থিতি নেই প্রায়, গলাটা শুধু শুনতে পাওয়া গেছে শেষ বেলায় প্রায় - দেখেশুনে খুব বিরক্ত লাগছিল। ভাবছিলাম এ আবার কি ধরণের আঁতলামি! কিন্তু গোয়েন্দা গল্পের আকর্ষণটা ছাড়তেও পারছিলাম না। পুরোটা দেখতে তো হবেই।
ভাগ্যিস! বাকিটা, যাকে বলে, জাস্ট ফাটাফাটি! গল্পটার মূল ভাবটা অপরিবর্তিত রেখে কিছু বদল করা হয়েছে। কিন্তু বদলগুলো মোটামুটি যুক্তিপূর্ণ। ব্যোমকেশরূপী অনির্বাণ ভটচাজ অসাধারন, বিজয়ের ভূমিকায় সৌমিক মৈত্রও নজর কাড়বে। রিদ্ধিমাও সাবলীলভাবে স্বাভাবিক সত্যবতীর চরিত্রে। ভাস্বর চ্যাটার্জ্জী এবার অজিত - নতুন মুখ, নতুন অভিব্যক্তি!
তবে যেটা আরেকটি চমক, সেটার আঁচ নাম দেখানোর সময় খেয়াল করলেই পাওয়া যাবে। অনির্বাণ ভট্টাচার্য এবার শুধু ব্যোমকেশ হিসেবে নয়, আর্ট ডিরেক্টর হিসেবেও বিদ্যমান। প্রমাণ প্রতিটা গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যের শটের নির্বাচনে! দৃশ্যের মধ্যে দিয়েই গল্পটা পরিবেশন হয়েছে পরিমিত সংলাপের সাথে - এটাই তো শিল্প, এটাই তো আমার মতে সঠিক চলচ্চিত্রায়ণ! সাথে আছে শুভদীপ গুহর অসামান্য ওপেনিং স্কোর, যা 'এলিমেণ্টারি' ও 'শার্লক'-কে মনে করাতে পারে।
অনন্যসাধারন হতে পারত সিরিজটা। কিন্তু মনের মধ্যে অস্বস্তি যে রয়েই যাচ্ছে। নাম পাল্টে কাহিনী আত্মপ্রকাশ করলো, প্রসঙ্গ অনুযায়ী মানলাম (মানেটা অভিধান থেকে দেখতে হয়েছে)। গোয়েন্দা দেরিতে দৃশ্যে প্রবেশ করছে, সেটাও মানলাম। আরো অনেক কিছু মানলাম। কিন্তু তা বলে ব্যোমকেশের পেট খারাপের অসুবিধা গোটা পর্বগুলো জুড়ে দেখাতে হবে। একটু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে গেল না কি। ব্যোমকেশ মধ্যবিত্ত বাঙালী গোয়েন্দা। সেটা আমরা জানি। তার পেটখারাপ হলেও তাই, না হলেও তাই। সেটাকে এরকম পেটখারাপের মধ্যে দিয়ে দেখানোর দরকারটা ঠিক হজম হলো না, অবশ্য যদি এই প্রসঙ্গটাকে অনির্বাণের অভিনয়বোধের অসামান্যতা বোঝানোর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, তাহলে আলাদা কথা! কিন্তু তাহলে যে ব্যপারটা অপ্রাসঙ্গিক! তাই ব্যোমকেশকে শৈল্পিক আঙ্গিকে দেখালেই চলবে, তার ব্যক্তিত্বকে অস্বাভাবিক অপ্রাসঙ্গিকতার প্রলেপ দেওয়াটা অনাবশ্যক।
No comments:
Post a Comment