Thursday, January 13, 2022

গোরা....কাণ্ড

বাঙালী দর্শকমাত্রেই গোয়েন্দা গল্পের পোকা! আর রহস্য রোমাঞ্চ ধারাবাহিক হলে তো কথাই নেই, টি আর পি এমনি এমনি বেড়ে যাবে। জানা কথা যে গল্পের শেষে গোয়েন্দা ঠিক অপরাধী ধরে ফেলবে। তবুও গোয়েন্দা গল্প এক অমোঘ আকর্ষণ বাঙালী দর্শকমাত্রে।  বলতে কি, অনেকটা এই কারণেই আমার গোরা দেখার সূত্রপাত। আরো একটা কারণ অবশ্য ছিল, তবে গৌণ - ঋত্বিক। এই ভদ্রলোকের অভিনয় আমার বেশ লাগে এবং গোয়েন্দা চরিত্রে তিনি কি করেন সেটা দেখার আলাদা করে বাসনা ছিল। এর আগে ব্যোমকেশের বন্ধু হিসেবে অজিতের চরিত্রে দেখেছি। এবার গোয়েন্দা হিসেবে কেমন দেখব ভাবছিলাম। তবে মুলতঃ গোয়েন্দা কাহিনীর টানেই কিন্তু সিরিজটা দেখতে শুরু করি।

কিন্তু প্রথম পর্বে দৃশ্যে পদার্পণ মাত্রেই এবং পর্বটা খতম হওয়ার আগেই আমার গৌণ উদ্দেশ্যটাই আসল হয়ে গেল এবং সিজনটি শেষ হবার আগেই ঋত্বিক চক্রবর্তী অভিনীত গোরা চরিত্রটি এতটাই আমার কাছে প্রাধাণ্য পেয়ে গেল যে, গল্পে যদি গরুকে গাছে চড়ানো দেখানোও হত, আমি তবুও বসে বসে তাই দেখতাম। এরকম স্বতঃস্ফূর্ত অভিনয় আমি শেষ কার থেকে কবে দেখেছি জানি না। বেসুরো গান পাগলা, সাঙ্ঘাতিক খ্যাপাটে, প্রচন্ড ভুলো, নাম পর্যন্ত মনে না রাখতে পারা, জগতের যাবতীয় স্বাভাবিকতা সম্বন্ধে উদাসীন, কিন্তু তীব্র নজর আর তীক্ষ্ণ বিশ্লেষণী শক্তির অধিকারী গোয়েন্দা চরিত্রে ঋত্বিক গোড়াতেই ফাটাফাটি। অবশ্য সত্যি করে বললে কিন্তু ফাটাফাটিটা আমি ঋত্বিককে বললাম না গোরা চরিত্রটাকে বললাম সেটা ঠিক বলতে পারবো না। কারণ গোরা চরিত্রটার মধ্যে ঋত্বিক এমন করে মিশে গেছেন যে আলাদা করতে অন্য গোয়েন্দা লাগবে! সত্যি বলছি গল্পটায় এমন কিছু নেই যাতে একে রুদ্ধশ্বাস প্লট বলা যায়, উপরন্তু বেশ কয়েকটি জায়গায় বালকসুলভ গণ্ডগোল আর অতি সরলীকরণ আছে যেটা গোয়েন্দা গল্পে বেশ দৃষ্টিকটু। কিন্তু তাও বলছি, পর্বগুলি ঋত্বিকের অভিনয় আর প্লটের স্বচ্ছন্দ গতির দৌলতে যেন এক টুকরো মুক্ত বাতাস উপহার দিয়েছে আমাদের। গোয়েন্দা গল্পে হাস্যরসের সঠিক মিশ্রণ আজকাল বেশি দেখতে পাওয়া যায় না। কোথাও অস্বাভাবিক রকমের অতিরিক্ত হয়ে যায় তো কোথাও একদমই অনুপস্থিত থাকে। এখানে মজা আছে তো বটেই, যেখানগুলো অতিরিক্ত হয়ে যেতে পারত সেই জায়গাগুলোতেও পরিচালনা ও অভিনয়ের অসামান্যতায় হয়ে উঠেছে স্বাভাবিক। মজার মোড়কে পরিবেশিত সাহানা দত্তের কাহিনীর রহস্য তার গাম্ভীর্য তো হারায়নি, বরং হয়ে উঠেছে প্রাণবন্ত ও সজীব। যেরকম তিনি দুটি গল্পকে মিশিয়ে ব্যোমকেশ সিরিজ তৈরি করেছিলেন, তেমনি সায়ন্তন ঘোষাল এখানেও দুটি গল্পকে একটি কাহিনীর মধ্যে নিয়ে এসেছেন। আবার গোরাকে প্রশাসন যদিও ধারাবাহিক খুন বিশেষজ্ঞ বলে অভিহিত করেছে, কিন্তু অন্যান্য অপরাধ সম্বন্ধেও গোরা সমান ওয়াকিবহাল। একারণে সে যদিও লেখকদের রহস্যময় খুনের তদন্তে সিরিয়াল কিলার ধরতে পুলিশকে সাহায্য করতে তৈরি, কিন্তু যখন এক গৃহবধূ তার স্লিপওয়াকিং নিয়ে এক অস্বাভাবিক ঘটনার উত্থাপন করে, সমস্যাটা তার কৌতুহল উদ্রেক করে। তবে এই কেসে সে অকুস্থলে যাওয়ার তাগিদ দেখায় না কিন্তু সমাধানের উপায় বাতলে দেয়। রহস্যে ভরা পরিবেশকে আরো চিত্তাকর্ষক করেছে অয়ন ভট্টাচার্য ও বিনীত রঞ্জন মৈত্রর ধ্বনির ও সুরের জমকালো ভারসাম্য। গোরার খামখেয়ালের সাথে তাল রেখে একাধারে তার বন্ধু, সহকারি আবার হবু ভগ্নীপতির চরিত্রে সুহোত্র মুখোপাধ্যায় অনবদ্য। বহুদিন বাদে গোয়েন্দা চরিত্রটির সাথে সমান তালে পাল্লা দেওয়া এক শাগরেদ চরিত্র পেলাম যে বন্ধুর পিছনে লাগা আর দরকার বা অদরকারে পাশে থাকতে সমান উৎসাহী। ঈশা সাহার চরিত্রটিতে চমকের একটা নতুনত্ব আছে তবে অভিনয়তে বিশেষ কিছু করার নেই। তবে পরবর্তী সিজনে যে তিনি বেশি কিছু করার সুযোগ পাবেন তার ইঙ্গিত যেমন আছে তেমনি সেখানে ঋত্বিকের পাশে দাপটের সাথে যে তিনি অভিনয় করবেন, তারও যথেষ্ট আভাস আছে।

তাই সময় নষ্ট না করে গায়কিতে ক্যাকোফনিক্স, দেমাকে পোয়ারো, রূপে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পাগলা জগাই আর খামখেয়ালে একদম নিজস্ব, ভুলোমনা গোরার সিরিজটি দেখুন ও কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে যান বিচিত্র কিছু রহস্যের খাসমহলে!

1 comment:

  1. আমারও বেশ লেগেছে। আশা রাখি পরের পর্ব গুলোতে গল্প গুলো আরও জমজমাট হবে

    ReplyDelete