Thursday, April 5, 2012

সিনিয়র কারে কয়!

ইস্টার্ন বাইপাস দিয়ে বাসে করে আসছি, ঝড় উঠেছে হঠাৎ করে। গুমোট গরমের মধ্যে বেশ ভালোই লাগছিল কিন্তু বিপত্তি বাধাল ধুলো। আমি দাঁড়িয়েছিলাম পিছন দিকে। তড়িঘড়ি সবাই জানলা বন্ধ করতে ব্যস্ত হতেই সামনে থেকে শুনতে পেলাম সব হাঁহাঁ করে উঠছে। কি হয়েছে? না ড্রাইভার জানলা বন্ধ করতে বারণ করছে। সব জানলা বন্ধ করলে হাওয়ার ঝাপটায় বাস উল্টে যাবে। প্রথমে অবশ্য ব্যাপারটা অনেকে বুঝতে পারেনি। ভীড়ের মধ্যে বক্তব্যটা একটু গুলিয়ে গেছিল। কেউ কেউ ভাবছিল, জানলা বন্ধ করলে ড্রাইভারের বুঝি গরম লাগবে। সেইজন্য বন্ধ করতে বারণ করছে! যাই হো্ক জানলা তো খোলা হল কিন্তু এবার শুরু হ'ল বৃষ্টি। জানলাবাসি অনেক যাত্রীই বাধ্য হয়ে সিট ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। এতে সুবিধে হ'ল আমার। প্যান্ট ভিজে যাওয়ার তোয়াক্কা না ক'রে একটা সিনিয়র সিটিজেন সিট বাগিয়ে বসলাম। সত্যিকারের সিনিয়র যিনি ওখানে বসে ছিলেন তিনি উঠে যাওয়ার পর জায়গাটা খালিই যাচ্ছিল। পাশের সিটের জুনিয়র ছেলেটি আদৌ জানলার পাশে যেতে উৎসাহী তো ছিলই না বরং আমি সত্যিই ওখানে বসব কিনা একবার যাচাই পর্যন্ত করে নিল। তার সন্দেহের নিরসন ঘটিয়ে বসে পরার বেশ খানিক্ষণ পরেই বুঝতে পারলাম যে আমি সত্যি সত্যিই এবার সিনিয়র হয়ে গেছি। ঘটনাটা হ'ল পাশের ছেলেটি তো কানে handsfree গুঁজে দিয়েছে, খুবই আনন্দের কথা কিন্তু যন্ত্রনার কথা হ'ল ওই হেডপিসটি থেকে একটা জোরালো নীল আলোর ঝিকিমিকি বের হচ্ছিল যেটা পাশ থেকে উপভোগ করা বেশ কঠিন। বিরক্তি এবং কৌতুহল নিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে ব্যাপারটা ভাল করে বোঝার চেষ্টা করতেই আরও একটা মজার ঘটনা দেখলাম। এইসব ঝিকিমিকির প্রতি প্রগাঢ় উদাসীনতায় এবং গানবাজনার আবেশে চোখ বন্ধ করে ছেলেটি নীরবে এক মুখনৃত্য (অভিধানের বাইরে এর মানেটা শুধু আন্দাজে বুঝলেই চলবে) অনুষ্ঠিত ক'রে চলেছে। বোধকরি গানের তালে তালেই হবে, থুতনির উপরিভাগ সামনে-পিছনে এমন সবচ্ছন্দভাবে আসা-যাওয়া করছে যে আমার খানিক্ষণের আগে পাওয়া বিরক্তি চলে গিয়ে এক তার বদলে এই বিচিত্র মিশ্রকলার কুশলীকে নিরিক্ষন করে দুরন্ত সময় কেটে গেল। কিন্তু মাটি ক'রল ছেলেটির একটি ফোনকল। ঝিকিমিকিটি বন্ধ হ'ল না কিন্তু নাচটি বন্ধ হওয়ার দরুন আমার আগ্রহ চলে গেল। কিন্তু খানিক্ষণের মধ্যেই আর একটি ঘটনায় বুঝলাম আমি তো বটেই, বাসটিও বেশ সিনিয়র হয়ে গেছে। একে তো উল্টে যাওয়ার দুশ্চিন্তায় আমি টানটান হয়েই ছিলাম, একটা ঝড়াং শব্দে প্রায় সিট থেকে লাফিয়ে উঠলাম। সামনে তাকিয়ে দেখি এক বিরল দৃশ্য, বাসের ঘণ্টা উপড়ে চলে এসেছে এক যাত্রীর হাতে। কন্ডাক্টর ঘণ্টার দড়ি ধরে টান মারতেই এই বহুদিনের অত্যাচারিত যন্ত্রটি আর সহ্য করতে না পেরে স্থানত্যাগ করেছে। কিন্তু যতই হোক কলকাতার ড্রাইভার বলে কথা, ঘণ্টাবিহীন বাসকে ম্যানেজ করে গন্তব্যে তো ঠিক ঠিক আনল!

No comments:

Post a Comment