Sunday, March 31, 2024

Robinson Street Horror Story Myth vs Reality: সত্য বনাম সিদ্ধান্ত!

ছয় পর্বের তথ্যচিত্রটির মোট দৈর্ঘ্যের তুলনায় কম তথ্য, প্রচুর বক্তব্য, একই ঘটনা, ছবি ও দৃশ্যের বারংবার পুনরাবৃত্তি এবং সিদ্ধান্ত পেশ করার বিরক্তিকর তাগিদ - বলা যায় এটাই যেন তথ্যচিত্রটির ভাবনার মূল সারাংশ! কিন্তু এমন তো হওয়ার ছিল না! কলকাতার রবিনসন স্ট্রিটে উন্মোচিত হওয়া চাঞ্চল্যকর ঘটনা নিয়ে তথ্যচিত্র তো হবে কৌতুহলোদ্দীপক!
কিন্তু কই, সেরকম কিছু কি আদৌ হলো? মনে তো হলো না!
বাকিটা বলার আগে বরং আরেকবার ফিরে যাই অতীতে, ২০১৫ সালের জটিল সেই সকালে! যেদিন হঠাৎ রবিনসন স্ট্রিটের অরবিন্দ দের বাসভবন থেকে উদ্ধার হলো বাড়ির মালিকের অগ্নিদগ্ধ দেহ। বাড়ির শৌচালয় থেকে দেহ উদ্ধারের পর পুলিশের কাছে জেরা চলাকালীন অরবিন্দবাবুর ছেলে, পার্থ দে-র কথায় উঠে আসে আরেক চাঞ্চল্যকর তথ্য - পার্থবাবুর দিদি আর তাঁদের পোষা দুই কুকুর নাকি তাঁর ঘরেই আছে! কথামতো আরেক দফা তল্লাশি চালিয়ে পুলিশের কাছে উদ্ঘাটিত হয় আরেক ভয়ানক সত্যের - পার্থবাবু মাসছয়েক নিজের ঘরের বিছানায় একটি মানুষের কঙ্কাল ও সেই ঘরেতেই দুটি জন্তুর কঙ্কালের সাথে বাস করছেন আর তাঁর কথামতো সেগুলি তাঁর দিদি ও বাড়ির দুই পোষ্যের! ব্যস, এবার শুরু হলো তোলপাড়। লোকেদের মুখে, কাগজের পাতায়, তখন শুধু একটাই খবর - পার্থ দে! যেটুকু তথ্য পাওয়া যেতে লাগল, তার উপর ভিত্তি করে মিডিয়াতেও তালে তাল মিলিয়ে চললো চুলচেরা বিশ্লেষণ, এবং, অবশ্যই, পার্থবাবুর বিচার!
তবে গুজব বাদ দিয়ে যে প্রশ্নগুলো ওঠা প্রয়োজন ছিল, এবং, উঠেছিল, তা হল,
কঙ্কালগুলো কাদের?
একটা মানুষ কি করে মৃত ব্যক্তির কঙ্কালের সাথে প্রায় মাসছয়েক একই ঘরে কাটাতে পারে, ভাবা দরকার যে কেউ যদি জানতে না পারত, আরো কতোদিন কেটে যেত এভাবে?
মানুষ আর কুকুরগুলোর মৃত্যু হলো, মৃতদেহগুলো কঙ্কালে পরিণত হলো, কিন্তু কোনোরকম গন্ধ বেরোল না কি করে?
অরবিন্দবাবুর আত্মহত্যার কারণ কি?
এই পরিস্থিতিতে বাজার দোকান করা ও বাইরের দুনিয়ার সাথে যোগাযোগ কি করে বজায় রাখা হতো?
এরকম হাজারো প্রশ্ন লোকের মনে হয়েছিল। আমারও হয়েছিল। কিন্তু তখন কেন জানিনা আমি নিজে খবরটা খুব একটা মনোযোগ দিয়ে নাড়াচাড়া করিনি। মনের মধ্যে পার্থবাবুর নামটা ও কঙ্কালকাণ্ডের স্মৃতি আবছা করে শুধু কিছুটা রয়ে গেছিল।
তাই এবার যখন শুনলাম যে ঘটনাটা নিয়ে একটা তথ্যচিত্র হবে, খুব আগ্রহের সাথে দেখতে বসলাম এই ভেবে যে পুরো ঘটনাটা এবার বোধহয় বুঝতে পারব।
কিন্তু কোথায় কি? মনোবিজ্ঞানী, মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের সাক্ষাৎকারকে প্রধান করে যে তথ্যচিত্র দেখলাম, সেটাতে পার্থবাবুর মনটাকে হয়তো চিনলাম কিন্তু ঘটনাটা যেন যেই তিমির সেই তিমিরেই রইল। এমনকি, এত বেশি সিদ্ধান্ত শুনলাম যে মনে হলো কিছুটা যেন আগে থেকেই ভেবে রাখা হয়েছিল কোন দিকটাকটাকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হবে। কমলেশ্বর মুখার্জ্জী খানিকটা যেন ব্যক্তিকে প্রাধান্য দিয়ে ফেললেন মূল বিষয় হিসেবে। কিন্তু তাহলে তো সিরিজটির নামকরণে গলদ থেকে যায়। মানতাম, যদি শুধুমাত্র পার্থ দে-কে অবলম্বন করে তথ্যচিত্র বানানো হতো। কিন্তু এখানে তো ঘটনাটা কেন্দ্রীয়, বাকিটা গৌন না হলেও মূখ্য তো বলতে পারি না! হতে পারে যে আমার চিন্তাটা ভুল, তবে কঙ্কালগুলো কি করে প্রমাণ হলো কাদের, অরবিন্দবাবুর মৃত্যু আর মৃতদেহ থেকে ঘরের মধ্যে কঙ্কালে রুপান্তর হওয়াটার বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা কেন হলো না? যেখানে স্বীকার করা হয়েছে দেশে মনোরোগ চিকিৎসা তুলনামূলকভাবে অনেকটাই নবীন - আনুমানিক ৭০ বছরের খানিকটা বেশি হবে - সেখানে প্রবীণ কিছু বৈজ্ঞানিক উপায় যেমন রসায়ন ও জীববিজ্ঞান, যেগুলো দিয়ে এই সমস্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া যেত, সেগুলিকে এরকম সরিয়ে রাখার প্রয়োজন ছিল কি? মানসিক অবস্থা নিয়ে আলোচনার মাঝে অনাবশ্যক কবিতাই বা কেন পাঠ করার দরকার হলো কমলেশ্বর মুখার্জ্জীর গলায়?
অল্প তথ্য ও অনেকটা ধারনা দিয়ে তৈরি এই তথ্যচিত্র মনে হলো কোভিডের সময়ে নির্মিত। পার্থবাবুর মানসিক দিকটাকে নিঃসন্দেহে অনেকটাই তুলে ধরা হয়েছে, কিন্তু তবু অনেক কিছুই রয়ে গেল অন্ধকারে। তথ্যের অপ্রতুলতা ছাড়াও তথ্যের একপেশে ভাব ব্যাপারটাকে অনেকটাই ক্লান্তিকর করে দিল! তবে পাওনা একটাই - নির্মিত চরিত্রকে শুধু মুকাভিনয় দ্বারা বিভিন্ন মানসিক রূপের বহিঃপ্রকাশ সমেত নিপুণভাবে মেলে ধরা লোকনাথ দে ও অময় দেবরায়ের পেশাদার অভিনয়ের যুগলবন্দী।

1 comment:

  1. বাঃ চমৎকার লেখা। পড়ে ঘটনার কথাটা মনে পড়ল।

    ReplyDelete