Saturday, June 18, 2022

Mahabharat Murders: মহাকাব্য ও motive

প্রথমে দ্রৌপদী, তারপর সহদেব, নকুল, অর্জুন। না, মহাপ্রস্থানের পথে পতন নয়, হত্যা! যেন একালের কোনো কৌরব কোনো অন্ধ প্রতিহিংসায় তার কল্পনার পাণ্ডবদের নিধন করে চলেছে এক এক করে, মহাকাব্যেরই বর্ণিত যোদ্ধাদের বধ করার ছলে। মৃত ব্যক্তিকে তাই কখনো ভীষ্মের শরাসনে দেখা যায়, কখনো দেখা যায় উড়ুভঙ্গ চেহারায়, তো কখনো শরীরটা ফেলা থাকে জরাসন্ধ বধের অবস্থায়! সঙ্গে দেওয়ালে দুটি ছবি আটকানো থাকে। একটির বিষয় – মহাকাব্যে বর্ণিত চরিত্রটির যাকে উদ্দেশ্য করে খুনটা, আর অন্যটি – এখনকার যুধিষ্ঠির হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এক আপাতদৃষ্ট সত্যবাদী নেতা ও তার বক্তব্যযুক্ত চিত্র। খুনের কারণ বোঝাটাই দুষ্কর হয়ে ওঠে। তবে কি যুধিষ্ঠিরই তার শেষ লক্ষ্য? নাকি আরো কেউ আছে? খুনের সূত্রপাত দ্রৌপদী দিয়েই হল? নাকি তার আগেও কোনো খুন হয়েছে যার কোনো কিনারা হয়নি? খুনি কি এক না অনেক? এরকম হাজার প্রশ্ন আর জটিলতা ভাবিয়ে তোলে পুলিশ কর্মচারী রুকসানা আহমেদ আর যুধিষ্ঠির হিসেবে প্রতিষ্ঠিত নেতা পবিত্র চ্যাটার্জ্জীকে। খুনের এই মহামিছিলের রহস্যভেদ করতে হাতড়াতে হয় অতীতকে। সেখান থেকে উঠে আসে কিছু ভয়ঙ্কর সত্য। বাকিটুকু জানতে দেখতে হবে সৌমিক হালদার পরিচালিত বারো পর্বের এই টানটান উত্তেজনায় ভরা সিরিজ। যেরকম সৌমিক হালদারের পরিচালনা হয়, এরকম জটিলতায় ভরপুর কাহিনী অকারণ গতিময়তার প্রলেপে না মুড়িয়েও টানটান উত্তেজনাটা কাহিনীর শেষ অবধি রেখে যেতে পেরেছেন। এটাই তাঁর সফলতা আর নতুন পরিচালকদের মধ্যে এই জন্য এনার পরিচালনা আমার দারুন লাগে। তার সাথে আছে গল্পের নতুনত্ব। অর্ণব রায় রচিত “The Mahabharat Murders” অবলম্বনে সিজনটি প্রতিহিংসা ও লালসার গতানুগতিক নিয়মে থেকেও এক অনবদ্য মোড় ঘুরিয়ে দেয় কিছু মুখোশের আড়ালে থাকা মানুষদের ও অন্তরালে থাকা ঘটনার অদ্ভুত পরিসমাপ্তি দেখিয়ে। তবে কিছু জিজ্ঞাস্য থেকেই যায় যেগুলো আপাততুচ্ছ লাগতে পারে কিন্তু কাহিনীর সম্পুর্ণতার জন্য যার সংশয়াতীত ব্যাখ্যার থাকাটা কাম্য ছিল। অভিনয়তে প্রিয়াঙ্কা সরকার মুখ্য চরিত্রে বেশ মানিয়ে গেছেন। কিন্তু পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করে সবাইকে ছাপিয়ে গেছেন দেবাশিস মণ্ডল। এই ভদ্রলোক কিন্তু আমার মতে লম্বা দৌড়ের ঘোড়া। চরিত্র মুখ্য হোক কি গৌণ, সে বেদনার হোক কি ক্রুরতার, সবকিছুই তিনি ফুটিয়ে তোলেন স্বচ্ছন্দ সাবলীলতায়। অন্যদিকে শাশ্বত চ্যাটার্জ্জী আর কৌশিক সেনও হালটা শক্ত করে ধরার জন্য গাম্ভীর্যটা বেড়ে গেছে। দ্বিতীয়জনকে দেখছি বয়স বাড়ার সাথে সাথে গুরুগম্ভীর চরিত্রে অভিনয় করলে চেহারায় একটা সামঞ্জস্যপূর্ণ কাঠিণ্য ফুটিয়ে তুলে আলাদা মাপের অভিনয় উপহার দিয়ে যাচ্ছেন দর্শকদের। আবার গুরুত্বপূর্ণ আরেক চরিত্রে শাশ্বত অসামান্য। অন্যদের মধ্যে পার্শ্বচরিত্রে ঋষভ বাসুর উপস্থিতি ও অভিনয় চোখে পড়ার মতো লেগেছে। মোটকথা, রোমাঞ্চ ও নাটকীয়তায় ভরা কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য তৈরি জমাটি সিরিজটি অবশ্যই দেখার দাবী রাখে।

No comments:

Post a Comment