একেনবাবু কলকাতায় এলেন.... অপরাধ দেখলেন..... সমস্যার সাথে সাথে দর্শকদের মনও প্রায় জয় করে ফেলেছিলেন, কিন্তু বাদ সাধল শেষটুকু! অবশ্য এরকম কর বলাটা হয়তো ঠিক হচ্ছে না, অভিযোগটা হতেই পারে একান্তই আমার ব্যক্তিগত মত। তাই আগে বরং বলে নেওয়া যাক মনকাড়া প্রসঙ্গগুলোর সম্বন্ধে।
প্রথমেই প্রশংসা করতে হয় গল্পগুলোকে সমস্ত বয়সের উপযোগী করে তোলার প্রয়াসটাকে। যেখানে বহু সিরিজ ওটিটির সেন্সরশিপের বাইরে থাকার সুবিধাটাকে হাতিয়ার করে অকারণ অকথ্য ভাষা ও কয়েকটি অস্বাভাবিক রুচির দৃশ্য ঢুকিয়ে বেকার সীমিত সংখ্যক লোকজনের দেখার জন্য পরিবেশন করছে, সেখানে প্রাপ্তবয়স্ক প্রসঙ্গের সম্ভাবনা দেখলেই তাকে সুচারুরূপে সমস্ত বয়সের উপযোগী করে পরিবেশন করার সাহসী এবং সংযমী প্রয়াসকে সেলাম। প্রতি কাহিনীতে ধারাবাহিকভবে ব্যাপারটাকে ধরে রাখার চেষ্টা অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য।
এরপর অভিনয়। এতদিনে অনির্বাণ চক্রবর্তী তো একেনবাবুর সাথে প্রায় সমার্থক হয়ে গেছেনই রুপোলী পর্দায়, কিন্তু এবার, সুহোত্র মুখোপাধ্যায় ও সোমক ঘোষ যথাক্রমে বাপীবাবু ও প্রমথবাবু চরিত্রদুটিকে আরো স্বাভাবিক ও প্রাণবন্ত করে ফুটিয়ে তুলে চক্কোত্তিবাবুকে ছাপিয়ে গেছেন! সুহোত্র ও সোমক একেনবাবু সিরিজে প্রথমবার আত্মপ্রকাশ করে জমিয়ে যুগলবন্দী পরিবেশন করলেন। চরিত্রদুটিতে অভিনয় করা পূর্বতন অভিনেতাদের ছোটোপর্দায় অভিনয়কে ছোটো না করেও বলছি, নতুন এই জুটি সত্যিই অনবদ্য! অবশ্য বড়পর্দায় একেনবাবু ছবিতে এই দুজন আগে এই চরিত্রদুটি করে তারপর সিরিজে অবতীর্ণ হয়েছেন। তাই যেন সিরিজে দুজনে এত সাবলীল, এত মজাদার! তার সাথে শুভ্রজিৎ দত্ত ও বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী দুটি ছোটো অথচ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে জমিয়ে দিয়েছেন। চরিত্রদুটি ছোটো দৈর্ঘ্যের হলেও, মূল রহস্যের গাম্ভীর্যকে এতটুকু না কমিয়েও হাসিঠাট্টা মেশানো কিছু টাটকা মুহুর্ত উপহার দিয়েছেন। তার সাথে আছেন লোকনাথ দে। ভদ্রলোককে 'মন্দার' থেকে দেখছি যে পর্দায় উপস্থিতির প্রতিটি ক্ষণকে কি এক জাদুতে অসামান্য করে তোলেন, শুধুমাত্র অভিব্যক্তি দিয়ে।
কিন্তু এত করেও সমস্যাটা তাহলে কি হল? সমস্যাটা দেখতে পেলাম গোয়েন্দার সত্ত্বাতে। অপরাধীকে ধরতে গোয়েন্দাকে হতেই হবে কঠিন, প্রয়োজনে রূঢ়, কিন্তু অপরাধীর অসহায়তাকে কি করে অস্বীকার করবে? কি করে অপরাধীকে ধরিয়ে দেওয়ার পরেও অসহায়তাকে নিয়ে খরচ করবে না কোনো মুহুর্ত। কাহিনীকার কি লিখে গেছেন জানি না, তবে পরিচালক হিসেবে জয়দীপ মুখার্জ্জীবাবু ভেবে দেখতে পারেন। না হলে ব্যোমকেশ, ফেলুদা, কিরীটি তো কোন ছাড়্, গোয়েন্দা অর্জুনও অনেকটা এগিয়ে থাকবে। উচ্চমানের সত্যসন্ধানী উচ্চ মনের অধিকারী হলে তবেই হৃদয়ে থেকে যাবে।