Sunday, October 16, 2022

Murder by the Sea: হত্যা আর পুরী!

বাঙালী চিত্রপরিচালকদের মধ্যে অঞ্জন দত্তের পরিচালিত ছায়াছবিগুলিকে অসাধারন কেউ বলবে না বোধহয়। তবে সাধারন বলার পরেও তার মধ্যে এমন কিছু ব্যাপার থাকে যেগুলো আমার চোখে ব্যক্তিগতভাবে আকর্ষণীয় লাগে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে স্থান নির্বাচন। উত্তরবঙ্গের পাহাড় ও কলকাতার গলির মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে শুধুমাত্র মানুষজন আর তাদের আবেগ ও অনুভূতিকে প্রাধান্য দিয়েও যে ছায়াছবি নির্মাণ করা সম্ভব, বোধহয় খুব বেশি পরিচালক ভাবতেও পারেন না। গল্পের স্থানগুলোর ভীষনভাবে বাঙালী পরিবেশ আরও বেশি আকর্ষন করে ও খুব অন্তরঙ্গ করে দেয় ঘটনাগুলোর সাথে। এতদিন তাই কলকাতা ও উত্তরবঙ্গের মানুষজনের সহজাত ও মাঝেমধ্যে অতিমাত্রায় অমার্জিত বাঙালীত্বের স্বাদ দিব্যি লাগছিল। সমুদ্রসৈকতের স্বাদটাও তার সাথে যোগ করে এবার যুক্ত হলো পুরী।

সঠিকভাবে দেখলে পুরীকে ঊড়িষ্যার শহর বলা উচিৎ, কিন্তু সমুদ্রের ধারে বঙ্গোপসাগরের এই পাড়টি ভীষনভাবে বাঙালীদের আপনার। জায়গাটি ঘিরে রহস্যের জাল বোনার জন্য পরিচালককে ধন্যবাদ। রহস্যের শুরুটাও সমুদ্রের পাড়ে এক গুলিবিদ্ধ লাশ থেকে। জলেতে ভিজে থাকা মৃত ব্যক্তিটিকে সাগর সৈকতের বালির মধ্যে আচমকা আবিষ্কার করেন স্নায়বিক রোগে পর্যুদস্ত কিন্তু রহস্য রোমাঞ্চ কাহিনীর এক জনপ্রিয় লেখিকা। আশপাশের কিছু ঘটনা ও চরিত্র লেখিকাকে আরও সন্দিহান করে তোলে। হত্যার কারনটা জানতে তিনি হয়ে ওঠেন বদ্ধপরিকর। মনে হয়, এতদিন তিনি যা কল্পনা করে লিখতেন, ঠিক যেন সেরকম কাহিনীর কোনো জায়গায় তিনি ঢুকে পড়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই তিনি হয় পড়েন কৌতুহলী। তার মধ্যে যোগ হয় অতীতের কিছু ফেলে আসা ঘটনার রেশ। নিজের অজান্তেই তিনি জড়িয়ে পড়েন অন্ধকার এক রহস্যের পরিবেশে। অতীত ও বর্তমান এক হয়ে তৈরি হয় এক জটিল সমস্যা যা অপরিচিতকে যেমন আপন করে তোলে, চেনা মানুষের লুকোনো কিছু অজানা ঘটনা বেরিয়ে আসে। আচমকা আড়াল থেকে আসে হামলা। এতটা হয়ে ঠিকই ছিল। অনন্যা চ্যাটার্জীর অভিনয়, সুপ্রভাত দাসের পার্শ্বচরিত্রে সাবলীল উপস্থিতি, অঞ্জন দত্তের কাহিনী রহস্যের জালটা গুছিয়ে বুনেছিল। কিন্তু বাদ সাধল সংলাপের আধিক্য এবং এক প্রসঙ্গ বারবার অবতরণ করার প্রবনতা যে অভ্যেসটা পরিচালক বোধহয় কিছুতেই ছাড়তে চাইছেন না। এই জায়গাটা যদি একটু খেয়াল রাখা যায়, পরবর্তী পরিবেশনা অবশ্যই অনেক বেশি রোমাঞ্চকর হবে।

পুরোটা দেখে তবে একটা কথাই বলব যে সিরিজটির বড় প্রাপ্তি হচ্ছে পুরী। অঞ্জন দত্তের ভিন্নমাত্রার ভাবনায় ও প্রভাতেন্দু মণ্ডলের চিত্রগ্রহণে রাতের পুরী, সমুদ্রের দিক থেকে শহরের ড্রোন শট, এক অদেখা সৌন্দর্য উপহার দিয়েছে। নীল দত্তের পরিচালনায় আবহ সঙ্গীত আরেকটি বড় প্রাপ্তি। এই ব্যাপারটায় অঞ্জন দত্তের পরিচালনা হলে আমার কাছে বরাবরের আকর্ষন থাকে। তাই সিরিজটি দেখুন। তবে রহস্যের জট থেকে আবহের রোমাঞ্চ নিশ্চিতভাবে বেশি মজা দেবে।